হাফিজ সাহেবকে যতটুকু দেখেছি।
- Gokul Roy

- Sep 18
- 2 min read

হাফিজ সাহেব শিক্ষকতাকে শুধু জীবিকা হিসেবে নয়, সমাজ জীবনে তাঁর প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। মানুষ গড়ার কাজে নিজেকে নিযুক্ত রেখেছিলেন। সততা, নিষ্ঠা, জীবনবাদের বিশ্বাসী এই মানুষটি। ছাত্রবস্থায় বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। পরে দাদা রমজান সাহেব ও ফরওয়ার্ড ব্লক দলের মতাদর্শে প্রাণীত হয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক দলের সংগঠনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠা ছিল তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আমরা একই নৌকার সহযাত্রী ছিলাম। রাজনৈতিক শিক্ষাশিবির থেকে মাঠে ময়দানে দূর্বলতর মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করে তাঁদের দাবী আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে তাঁকে দেখেছি। মানুষের প্রতি তাঁর মমত্ববোধ ছিল অসীম। বিরক্তি প্রকাশ রাগান্বিত হতে তাঁকে যেমন দেখেছি, আবার মুহুর্তেই সে সব ভুলেও যেতেন। হাফিজ সাহেবের সাথে আমার সম্পর্ক নিবিড়তর হয় ১৯৯৫ সালে। যখন হাফিজ সাহেব আমাদের জেলার তদান্তিন (পশ্চিম দিনাজপুর) জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নির্লোভ, নিপাট ভদ্রলোক হাফিজ সাহেবের সাদামাটা জীবনযাপন সততা অনুকরণীয়। ক্যাবিনেট মন্ত্রী থাকাকালীনও এর ব্যাতিক্রম ঘটেনি। যা অবশ্যই উল্লেখ্য।
হাফিজ সাহেব কংগ্রেসে যোগ দেওয়ায় আমাদের মধ্যে স্বভাবতই রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। নৈমিত্তিক যোগযোগটাও সেভাবে ছিল না। তাঁর অসুস্থতার খবর পাবার পর থেকে তাঁর পুত্র আলতামাস হাফিজ এবং ভাস্তা ভিক্টরের মাধ্যমে তাঁর খবরাখবর রাখতাম। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে তাঁকে অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে পিজি হাসপাতালে আইসিইউ-তে ভর্তির খবর পাই ২৭/১০/২৪ তারিখে দুপুরে। সাথে সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু নরেশ দাসকে সঙ্গে নিয়ে রাতের ট্রেনে রওনা দিয়ে ২৮/১০/২৪ সকালে কলকাতায় পৌঁছেই ভিক্টরকে ফোন করি। ভিক্টর আমাকে জানিয়েছিল, পিজি আইসিইউ-তে ভিজিটরদের রুগি দেখার সময় বৈকাল ৪টা। অতএব উদ্বিগ্নতা নিয়ে অপেক্ষা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। কিন্তু মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে ভিক্টরের ফোনে। সে জানিয়েছিল কাকা আর নেই। বেলা তখন দেড়টা। আমি ও নরেশ দাস তৎক্ষণাত রওনা দেই পিজি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। সেই হৃদয় বিদারক মুহূর্ত এতবছরের আমার ঘনিষ্ঠ সহযাত্রীর নিথর দেহ শায়িত আইসিইউ-তে। উনার স্ত্রী,পুত্র, কন্যা, ভাস্তা ভিক্টর ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন সকলেই শোকে মুহ্যমান। শান্ত্বনা দেবার ভাষা নেই। এতদূর ছুটে গিয়েও জীবিত অবস্থায় শেষ দেখাটা হল না, এই দুঃখ আক্ষেপ ও যন্ত্রণাবোধ কখনো ভোলার নয়। স্বজন হারানো বেদনা নিয়ে এই স্মৃতি মন্থন মনকে আরো বিষণ্ন ও ভারাক্রান্ত করেছে।
আমার উপলব্ধি এই সময়ে সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়রোধে তাঁর মতো মানুষের বড় বেশি দরকার।